বিশিষ্ট কলামিস্ট নির্মল সেনের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

বিশিষ্ট কলামিস্ট নির্মল সেনের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

এস কে এম মাহবুবুর রহমান, যুগকথা ডেক্স: বিশিষ্ট সাংবাদিক , কলামিষ্ট , বাম রাজনীতির পুরোধা , মুক্তিযোদ্ধা নির্মল সেনের ১২ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার। ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারী তিনি রাজধানী ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে ৮৩ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। তার ১২ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে আজ বুধবার প্রেসক্লাব কোটালীপাড়ার আয়োজনে সরকারি কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের  হলরুমে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক হোসেন শহীদ মজনু। প্রেসক্লাব কোটালীপাড়া’র সভাপতি এইচ এম মেহেদী হাসানাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রফেসর গৌরাঙ্গলাল চৌধুরী, প্রফেসর কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাস, সরকারি কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের প্রধান  শিক্ষক হিমাংশু কুমার পান্ডে, কবি মিন্টু রায়, প্রেসক্লাব কোটালীপাড়া’র সাধারণ সম্পাদক গৌরাঙ্গ লাল দাস, সাংবাদিক রতন সেন কংকন, মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল বক্তব্য রাখেন।

নির্মল সেন ১৯৩০ সালের ৩ আগষ্ট গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার দিঘীরপাড় গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত । মাতার নাম লাবন্য প্রভা সেন গুপ্ত। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নির্মল সেন পঞ্চম । নির্মল সেনের পিতা  সুরেন্দ্র নাথ সেন গুপ্ত কোটালীপাড়ার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীট কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনষ্টিটিউশনের গনিত শিক্ষক ছিলেন। এর আগে সুরেন্দ্র নাথ সেন গুপ্ত ঢাকার ইষ্ট বেঙ্গল ইনষ্টিটিউটে শিক্ষকতা করতেন। দেশ বিভক্তির পরে নির্মল সেনের পিতা মাতা অন্য ভাই বোনদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতা চলে যান। জন্মভূমির প্রতি অকুন্ঠ ভালবাসার কারনে তিনি এদেশে থেকে যান। নির্মল সেন বড় হযেছেন ঝালকাঠি জেলায় তার পিসির বাড়ীতে।। তিনি ঝালকাঠি জেলার কলসকাঠি বিএম একাডেমি থেকে ১৯৪৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাস করেন। পিসির বাড়ীতে যাওয়ার আগে নির্মল সেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জিটি স্কুলে ৪র্থ শ্রেণিতে এক বছর লেখা পড়া করেন। তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আইএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ ও মাষ্টার্স পাস করেন। ষ্কুল জীবন থেকে নির্মল সেনের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ”ভারত ছাড়ো” আন্দোলনের মাধ্যমে । কলেজ জীবনে তিনি অনুশিলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তিতে তিনি আরএসপিতে যোগ দেন। দীর্ঘ দিন তিনি শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনীতি করতে গিয়ে নির্মল সেনকে জীবনের অনেকটা সময় জেলে কাটাতে হয়েছে।

১৯৫৯ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার মধ্যে দিয়ে নির্মল সেন তার সাংবাদিক জীবন শুরু করেন। তার পর দৈনিক আজাদ , দৈনিক পাকিস্তান , দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিষয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। গোপালগঞ্জের প্রথম প্রকাশিত দৈনিক যুগকথা পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক শেখ মোঃ ইলিয়াস এর সাথে সাংবাদিক ও লেখক নির্মল সেনের ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তারা দুজনেই বামপন্থী রাজনীতি করেছেন একসাথে। তৎকালীন সময়ে নির্মল সেনের বিভিন্ন লেখা দৈনিক যুগকথা পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হতো। তার সেই লেখা দৈনিক যুগকথা'কে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে সে সময়। নির্মল সেনের লেখা বিভিন্ন প্রতিবেদন, কলাম পড়ার জন্য এক শ্রেণীর পাঠক নিয়মিত দৈনিক যুগকথা পত্রিকা সংগ্রহ করতেন। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে দৈনিক যুগকথার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এস কে এম মাহবুবুর রহমান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। একই সাথে তিনি পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক শেখ মোঃ ইলিয়াস এবং নির্মল সেনের রুহের মাগফেরত কামনা করেন। এ সময় তিনি বলেন, জাতি এক দূরদর্শী লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং রাজনীতিবিদ কে হারিয়েছে। যার অভাব কখনোই পূরণ হবার নয়। লেখক হিসেবেও নির্মল সেনের যথেষ্ট সুনাম রযেছে। তার লেখা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ , মানুষ সমাজ রাস্ট্র , বার্লিন থেকে মষ্কো , মা জন্মভূমি , স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই ,আমার জীবনে ৭১এর যুদ্ধ, আমার জবানবন্দি উল্লেখযোগ্য ।