যুগকথা ডেক্সঃ
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় একটি এনজিওর বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের খাবার খেয়ে গত সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ে ২ শতাধিক শিশু-কিশোর। এরমধ্যে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয় ১৬৭ জন।বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নেয় ১৫ জন। গত সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার দুপর ২টার মধ্যে অসুস্থ সকলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
খাবার সরবরাহকারী হোটেল ব্যবসায়ী গোবিন্দ বোসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে কোটালীপাড়া থানা। এদিকে কোটালীপাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি জায়গা দখল করে হোটেল নির্মাণ করায় হোটেলটির সরকারি জায়গার অংশ ভেঙ্গে দেওয়া হয়ছে।
জানাগেছে, সোমবার সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত চার্চ অব বাংলাদেশের ‘মধ্য দক্ষিণ বাংলাদেশ শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের’ কোটালীপাড়ার কান্দি ইউনিয়ণ শাখায় সংস্থাটির তালিকাভূক্ত ২শত৯৬ জন শিশু-কিশোরকে নিয়ে বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠান শেষে এ সকল শিশু-কিশোরকে সোমবার দুপুর ২ টার দিকে বিরিয়ানী খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়। এই বিরিয়ানীর প্যাকেট বাড়িতে নিয়ে শিশু-কিশোরগণ খাওয়ার পরে সন্ধ্যার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে অসুস্থ শিশু-কিশোরদের অভিভাবকগণ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত ২ ঘটিকা পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক শিশু-কিশোরকে অসুস্থ অবস্থায় কোটালীপাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করে চিকিৎসা হয় এবং আজ মঙ্গলবার বিকালে সকল রোগি সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছে বলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রসূত্রে জানাগেছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে ধারাবাশাইল গ্রামে অসুস্থ রোগীদের খোঁজ নিয়ে গিয়ে ওই গ্রামের বিপুল রায়ের স্ত্রী সাথী রায় বলেন, আমার চার মেয়ে ইষ্টিলা রায় (১১), এঞ্জেলা রায় (৯), সৃষ্টি রায় (৬), পল্লবী রায় (৩) সোমবার সকালে চার্চ অব বাংলাদেশের একটি প্রকল্পের অনুষ্ঠানে যায়। বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে ওরা ওই প্রতিষ্ঠানের দেওয়া বিরিয়ানীর প্যাকেট খাবার নিয়ে বাড়িতে আসে। এরপর তারা ওই খাবার খাওয়ার কিছুক্ষন পরই বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এরপর তাদেরকে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসি। হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের চিকিৎসা নেই। আজ হাসপাতাল থেকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসি এখন তারা সকলে সুস্থ আছে।
কান্দি গ্রামের পরিমল বাড়ৈ বলেন, আমার দুই মেয়ে পুজা (১৩) ও প্রিয়ন্তি (৮) ওই অনুষ্ঠানের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হয়। পূজা স্থানীয় কান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে ও প্রিয়ন্তি কান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেনিতে পড়ে।
আজ মঙ্গলবার সকালে গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ মাসুদ রানা কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেছেন। তিনি এসময় চিকিৎসক, নার্স, রোগী ও রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলেন। পরে তিনি কান্দি ইউনিয়নের 'চার্চ অব বাংলাদেশ' এর একটি প্রকল্পের অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহকারী ধারাবাশাইল বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী গোবিন্দ বোসের হোটেল পরিদর্শন করেন। এ সময় কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা.কুমার মৃদুল দাস ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা.এস এম সাকিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সিভিল সার্জন ডা. মো: মাসুদ রানা বলেন, হোটেল পরিদর্শন করে জানাগেছে পরিবেশিত বিরিয়ানীর ডিম ও মাংস আগের দিন ফ্রাই হয়। এছাড়া বিরিয়ানীর প্যাকেট সোমবার ভোরে প্যাকেটিং করা হয়।এসব কারণে খাবারে সমস্যা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্চে। খাবারের স্যাম্পল সংগ্রহ করে ঢাকা পাঠানো হয়েছে।এছাড়া কোটালীপাড়ার হোটেল গুলোতে বাসি ও ফ্রিজিং করা খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। এখাবার স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এটি বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। পাশাপাশি হোটেল মালিকদের এ ব্যাপরে সচেতন করতে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনকে পরামর্শ দিয়েছি।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর আক্তার বলেন, সোমবার রাতে খবর শোনার সাথে সাথে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ছুটে যাই। চিকিৎসকদের সাথে ও রোগীদের সাথে কথা বলি। রোগীদের সুবিধার জন্য সরকারি এম্বুলেন্সের পাশাপাশি বেসরকারি এম্বুলেন্স সুবিধা রাখা হয়। একইসাথে সারারাত হাসপাতাল সংলগ্ন সকল ফার্মেসী খোলার ব্যবস্থা করি। যাতে জরুরী মুহুর্তে রোগীদের কোন দুর্ভোগে পড়তে না হয়।
আজ মঙ্গলবার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা পারভীন চার্চ অব বাংলাদেশের প্রজেক্ট ও খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। আনইগতভাবে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া সরকারি জায়গায় হোটেল নির্মাণ করায় হোটেলের একটি অংশ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে।
কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, খাবার সরবরাহকারী হোটেল ব্যবসায়ী গোবিন্দ বোস কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। খাবারে অনিয়মে সংশ্লিষ্টতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কান্দি ইউনিয়নের ওই চার্চের প্রজেক্ট ম্যানেজার রিপন কুন্দা বলেন, আমাদের সংস্থার তালিকাভূক্ত ৩শ’ ২০ জন শিশু-কিশোরকে নিয়ে আমরা প্রাক-বড়দিনের অনুষ্ঠান করি। তাদেরকে স্থানীয় ধারাবাশাইল বাজারের গোবিন্দ বোস হোটেল থেকে বিরিয়ানীর প্যাকেট কিনে সরবরাহ করি। এই বিরিয়ানী খেয়ে শিশু-কিশোররা অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা অসুস্থদের উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আমাদের সংস্থার অর্থায়নে চিকিৎসা দিয়েছি। সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। যীশুখ্রিস্ট সবাইকে রক্ষা করেছেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কুমার মৃদুল দাস বলেন, সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে হাসপাতালে বমি ও পাতলা পায়খানা জনিত সম্যসা নিয়ে শিশু-কিশোররা আসতে শুরু করে। রাত ২ টা পর্যন্ত ১৮২ জন রোগী এখানে আসেন। এরমধ্যে ১৬৭ শিশু-কিশোরকে ভর্তি করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। বর্হিবিভাগে চিকিসা নেয় ১৫ জন। অসুস্থ ১২০ জন রাতেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। আজ মঙ্গলবার ভোর থেকেও পর্যায়ক্রমে সুস্থ হয়ে রোগীরা বাড়ি ফিরতে থাকে। দুপুর ২টার মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি সকল রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়। আমরা ধারণা করছি খাদ্যে বিষক্রিয়ায় শিশু-কিশোররা অসুস্থ হয়েছে।