বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে লাশ হলো গোপালগঞ্জের তিন যুবক

বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে লাশ হলো গোপালগঞ্জের তিন যুবক
যুগকথা রিপোর্ট:
বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবে নিহত ৮ জনের মধ্যে তিনজনের বাড়ি গোপালগঞ্জ। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায় নিহতদের গ্রামের বাড়ীতে চলছে শোকের মাতম। সংসারের হাল ধরতে, বেকারত্ব বাঁচাতে গিয়ে দালালদের মাধ্যমে অবৈধ পথে বিদেশ যেতে গিয়ে করুণ পরিনতি মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হলো তাদের। নিহতদের পরিবারের আত্মীয় স্বজন প্রায় বাক রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। নিহতদের পরিবারের আশা সন্তানদের মরদেহ যেন বাড়ীতে আসে, এক নজর যেন লাশটা দেখতে পারেন।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গয়লাকান্দি গ্রামের পক্ষঘাতগ্রস্ত বাবা পান্নু শেখ অপেক্ষায় রয়েছেন ছেলে ইমরুল কায়েস আপনকে ফিরে পাওয়ার আশায়। তবে তিনি এখনো জানেন না ছেলে বেঁচে আছে না মারা গেছে। কেউ বলেছে হাসপাতালে আছে। কেউ বলেছে জেলে। আমি শুধু আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। ছেলেকে ফিরে পেলে আমার কোন অভিযোগ নেই। ছেলেকে না পেলে তারপর ব্যবস্থা নেব। তার একটাই চাওয়া তিনি যেন তার ছেলেকে ফিরে পান। একমাত্র ছেলের এভাবে হারিয়ে যাওয়া কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বাবা। কথাগুলো আক্ষেপের সুরে বলছিলেন ইটালি যাওয়ার পথে তিউনেশিয়া উপকূলে ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ ইমরুল কায়েস আপনের  বাবা পান্নু শেখ। 
মা কেয়া কামরুন নাহার ছেলের মৃত্যুর খবর পেলেও জানাননি পক্ষাঘাতগ্রস্ত অসুস্থ স্বামীকে। মা কেয়া কামরুন নাহার ছেলের শোকে  পাথর হয়ে পড়েছেন। তাই তিনি কারো সাথে কথা বলছেন না। শুধু অবাক নয়নে তাকিয়ে রয়েছে।
শুধু ইমরুল কায়েস আপন নয় এমন করুন পরিনতির শিকার হয়েছেন একই উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের দাদন শেখের ছেলে রিফাত শেখ ও ফতেপট্টি গ্রামের রাসেল শেখ।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গয়লাকান্দি গ্রামে ইমরুল কায়েস আপন বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় চারিদিকে শুধু শোকের  মাতম। প্রতিবেশীরা শুধু আসা-যাওয়া করছে, অনেকেই শোনাচ্ছেন নানা সান্তনার বাণী।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, নিহতের বাবা পান্নু শেখ ২০০৪ সালে সৌদি চলে যান। ১৫ বছর পর ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে একটি কোম্পানিতে ড্রাইভারের চাকরি করতেন। এক বছর আগে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেললে বন্ধ হয়ে যায় আয় রোজগার। তাই সংসারের হাল ধরতে এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ইমরুল কায়েস আপন ইটালি যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। পরে তার এক আত্মীয় রহিমকে ১১ লাখ টাকায় গত ১০ জানুয়ারি ইটালির উদ্দেশ্যে পাঠান ছেলে আপনকে। পরে গত ১৪ ফেব্রুয়রারী লিবিয়া থেকে ট্রলারযোগে ইটালির উদ্দেশ্যে রওনা দেন আপন। পরে ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবে ছেলের মৃত্যুর খরর বাড়ীতে অাসলে নেমে আসে শোকের ছায়া।
পান্নু শেখ সৌদি  থাকার সময় ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী কেয়া কামরুন নাহার  পাবনা বাবার বাড়িতে থাকতেন। ইমরুল কায়েস আপন পাবনাতেই পড়াশোনা করেছে। সেখান থেকে এসএসসিও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জি‌পিএ ৫ পে‌য়ে পাশ করার পর ভর্তি হন  রাজশাহী এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে তিনি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
শুধু আপন নয় একই চিত্র রিফাত শেখ ও রাসেল শেখের বাড়ীতে। তিন যুবকের মুত্যুতে শুধু পরিবার নয় গ্রামে জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহতদের বাড়ীতে ভীড় করেছেন গ্রামবাসী। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য দালালদের দৌরাত্ম কমাতে আইনী পদক্ষেপ নেয়ার দাবী স্থানীয়দের।
নিহত ইমরুল কায়েস আপনের বাবা পান্নু শেখ বলেন, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ আশপাশের অনেকেই ইতালি যায়। তাদের সঙ্গে ছেলেকে পাঠিয়েছেন। তাকে পাঠিয়ে এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি। গত ৮ জানুয়ারি এক্সিম ব্যাংকের টেকেরহাট শাখার মাধ্যমে দালাল রহিম এর কাছে এগারো লাখ টাকা পাঠাই। রহিম লিবিয়া থাকে। তার বাড়ি মুকসুদপুর উপজেলার রাগদী ইউনিয়নের গজনা গ্রাম। জীবনের সঞ্চিত সব সম্বল দিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। এখন কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।