কোটালীপাড়ায় আহত স্ত্রীকে চায়ের দোকানে রেখে চম্পট !

কোটালীপাড়ায় আহত স্ত্রীকে চায়ের দোকানে রেখে চম্পট !
যুগকথা রিপোর্ট:
যৌতুকের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এক গৃহবধূকে মারপিট করে আহত অবস্থায় চিকিৎসা প্রদান করার কথা বলে চায়ের দোকানে রেখে চম্পট দিল শ্বশুর বাড়ির লোকজন। ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামে।
পারিবারিক সূত্রে জানাযায়, ২০২২ সালে কোটালীপাড়া উপজেলার শুয়াগ্রাম ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামের শহীদ খাঁন এর ছেলে ইব্রাহিম খানের সাথে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিবাহে আবদ্ধ হন একই উপজেলার তাড়াশী গ্রামের সোলেমান শিকদারের মেয়ে রিয়া খানম এর। ইব্রাহিম খান একজন মসজিদের ইমাম হবার কারণে মেয়ের পরিবার আগ্রহের সাথে তাদের কন্যাকে তার সাথে বিয়ে দেন। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন যেতে না যেতেই তাদের আসল চরিত্র সামনে ফুটে ওঠে। যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই ইব্রাহিম খানের পরিবার রিয়া খানমের উপর নানাভাবে অত্যাচার করে আসছিল। সর্বশেষ ২০২৩ সালের শেষের দিক তাকে মারপিট করে আহত অবস্থায় কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নেওয়ার কথা বলে স্থানীয় পশ্চিমপাড় একটি চায়ের দোকানে রেখে তারা পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে মেয়ের আত্মীয়-স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা প্রদান করে।
এ ব্যাপারে রিয়া খানমের পরিবারের সাথে কথা হলে তারা জানান, বিয়ের কিছুদিন বাদেই ইব্রাহিমের বাবা শহিদ খাঁন ও মা রমিজা বেগম সংসারে শান্তির জন্য গরু কেনা বাবদ দুই লক্ষ টাকা দাবি করেন। এতে হতবাগ হয়ে পড়ে রিয়ার আত্মীয়-স্বজন। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে মেয়ের খালাতো ভাই রমজান গাজীর উপস্থিতিতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন ইব্রাহিম ইব্রাহিম খান এর মা-বাবার কাছে। সেই টাকায় গরুও কেনেন ইব্রাহিম খাঁন। তবুও সুখ কপালে সই ছিল না রিয়া খানমের বাকি দেড় লাখ টাকার জন্য বারবার চাপ দিতে থাকে তার পরিবারকে। কিন্তু দরিদ্র সোলেমান শিকদার উক্ত টাকার যোগান দিতে না পারায় তার মেয়েকে সহ্য করতে হয় অমানুষিক যন্ত্রণা ও অত্যাচার। এমন সময় তার স্বামী মসজিদের ইমাম ইব্রাহিম খাঁন এর স্বভাব চরিত্র ভালো না হওয়ার কারণে কোটালীপাড়া উপজেলার চিপ্পল বাড়ি মসজিদ থেকে কমিটির লোকজন তাকে বহিষ্কার করে। এরপরে যৌতুকের বাকি টাকার জন্য বারবার রিয়াকে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে ইব্রাহিম খান ও তার পরিবারের লোকজন। হঠাৎ একদিন রিয়া খানমকে অসুস্থ অবস্থায় পশ্চিমপাড় একটি চায়ের দোকান থেকে আমরা উদ্ধার করে চিকিৎসা প্রদান করি। সেই যে রিয়া খাননকে ফেলে চলে গেছে তার পরিবার আজ অবধি তাকে নিতে আসেনি কেউ।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ রিয়া খানম বলেন, আমি অনেক কষ্ট মেনে নিয়ে সংসার করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওরা আমার উপর অমানুষিক নির্যাতন করে আহত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়। ঘটনার প্রায় দুই বছর হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আমার স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির কেউ আমার খোঁজ নিতে আসেনি। উপরন্ত তারা হুমকি ধামকি দিচ্ছে তোকে তালাক দিতে আমার একটি গরু বিক্রি করলেই হবে। আমি এখন অসহনীয় অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছি। আমি এখন ওদের আইনগত শাস্তি দাবি করছি।
এ ব্যাপারে গ্রাম পুলিশ মোঃ সেলিম শিকদারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, উপরোক্ত ঘটনা সত্য। আমরা বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করেছি। এ ব্যাপারে কয়েকটা গ্রামের মনু মেম্বার, সালিশকারী মোস্তফা, ওই গ্রামের চৌকিদার সহ অন্যান্য গণ্যমান্য লোকজন বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করেও পারেননি।
তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত রিয়া খানমের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।