কোটালীপাড়া প্রতিনিধিঃ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ১০০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসহ নানাবিধ জনবল সংকটে ভেঙে পড়েছে চিকিৎসাসেবা। ২৮টি চিকিৎসকের পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র চারজন চিকিৎসক। এই সংকটের ফলে প্রতিদিন তিন লক্ষাধিক মানুষের নির্ভরযোগ্য চিকিৎসাকেন্দ্রটি আজ অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
২০২৩ সালে ৫০ শয্যা থেকে উন্নীত হয়ে ১০০ শয্যায় পরিণত হয় কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ শতাধিক রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন, যার মধ্যে ইনডোরে ভর্তি থাকেন ৬০ থেকে ১০০ রোগী। কিন্তু চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতালের আরএমও ডা. ফারুক হোসেন জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে তাকে প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। পাশাপাশি অফিসিয়াল কাজও সামলাতে হচ্ছে তাকে। তিনি আরও জানান, শুধু কোটালীপাড়া নয়, বরিশালের নাজিরপুর, পিরোজপুরসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকেও রোগীরা এখানে আসেন। অথচ এত বড় এলাকার জন্য চিকিৎসক আছেন মাত্র চারজন।
হাসপাতালের সাত তলা বিশিষ্ট ভবনে দীর্ঘ এক বছর ধরে লিপ্ট বন্ধ রয়েছে। রোগী ও স্বজনদের জন্য এটি একটি দুর্বিষহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। লিপ্ট অপারেটর না থাকায় লিপ্ট চালু করা যাচ্ছে না বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগে লিপ্ট কোম্পানি নিজস্ব অপারেটর দিয়েছিল, কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ায় তা আর বহাল নেই। এখনও সরকারি ভাবে অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
সেবা কার্যক্রম প্রায় অচল তিনটি পদের মধ্যে রয়েছে মাত্র একজন, যিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার কারণে ল্যাব একসময় পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
•দন্ত সার্জন না থাকায় দন্ত বিভাগ বন্ধ।
•গাইনী চিকিৎসক না থাকায় সিজার বন্ধ।
•এক্স-রে মেশিন পুরনো হলেও কোনো রিপোর্ট করা সম্ভব হচ্ছে না চিকিৎসকের অভাবে।
•করোনা টেস্টও বন্ধ, রোগীদের পাঠানো হচ্ছে জেলা হাসপাতালে।
জনবল সংকট প্রকট-
•৫০ জন স্বাস্থ্য সহকারীর পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৩১ জন।
•৮৫ হাজার স্কয়ার ফিটের বিশাল ভবনের জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ৩০ জন ক্লিনার, অথচ রয়েছে মাত্র ৪ জন (সরকারি ও আউটসোর্স মিলিয়ে)।
•৩টি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক মাত্র একজন। একটি অ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘদিন ধরে বিকল অবস্থায় পড়ে আছে।
ডা. কুমার মৃদুল দাস, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, “বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল নিয়োগের আবেদন জানানো হয়েছে। আমরা আশাবাদী দ্রুত নিয়োগ পেলে সমস্যার সমাধান হবে।”
নার্স সুপারভাইজার মমতা রানী রায় বলেন, “পর্যাপ্ত নার্স থাকলেও চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসাসেবা বিঘ্ন হচ্ছে। চিকিৎসকদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে, ফলে রোগী ও স্বজনদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে।”
ল্যাব ইনচার্জ কনিকা বিশ্বাস বলেন, “আমি একা কাজ করছি। আগে তিনজন থাকলেও এখন শুধুই আমি। অসুস্থ হয়ে চার মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম, তখন ল্যাব বন্ধ ছিল। এখন একটু একটু করে কাজ শুরু করেছি।”
গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের সুবর্ণা বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, “গাইনি চিকিৎসক না থাকায় সিজার বন্ধ। বাইরের ক্লিনিকের দালালদের কারণে রোগীও কম আসছে।”
স্থানীয় জনগণ ও সেবাগ্রহীতাদের পক্ষ থেকে বারবার দাবি উঠছে — দ্রুত চিকিৎসক ও অন্যান্য জরুরি জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এই ভয়াবহ সংকট নিরসন করতে হবে। এই দাবিতে সচেতন মহলের ।