স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশ গড়ে ওঠার জন্য ২০২৪ এর জুলাই সনদকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনি স্বীকৃতি প্রদান করে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। শনিবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ পৌর উন্মুক্ত মঞ্চে গোপালগঞ্জ জেলা খেলাফত মজলিসের আয়োজনে গণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মামুনুল হক এ কথা বলেন।
অর্ন্তরবর্তী কালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশের এখনো নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে গোটা দেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সমতার ভিত্তিতে) সৃষ্টি করার উদাত্ত আহ্বান জানাই। যাতে অংশীজনরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। আমরা সত্যিকার অর্থে বৈষম্যহীন ইনসাফপূর্ণ একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই।
জুলাই ঘোষণাপত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা রক্তের বিনিময়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতার স্বাদ বাংলার মানুষ উপভোগ করতে শুরু করেছে। এটাকে পূর্ণাঙ্গ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়াই আমাদের আগামীদিনের সংগ্রাম।
বাংলার মাটি থেকে ফ্যাসিবাদ উৎখাত হয়েছে নতুন করে কোন ফ্যাসিবাদ বাংলার মাটিতে শিকড় গাড়তে দেওয়া হবে না। দেশের মানুষ অনেকবার প্রতারিত হয়েছে, এদেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রামের প্রতিবারের বিজয়কে ছিনতাই করা হয়েছে। এবারের বিজয়ের অর্জন যে কোন অপশক্তি ছিনতাই করতে আসবে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষের প্রসঙ্গ তুলে মামুনুল হক বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে- জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনে। কিন্তু সেই উচ্চকক্ষ কিভাবে গঠিত হবে যেটা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পক্ষগুলো এক মতে আসতে পারেনি। আমাদের জন্য এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়। জুলাই বিপ্লবে যাদের সন্তানেরা রক্ত দিয়ে ৫ আগস্ট নতুন করে স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন করেছে। শাহাদতবরণকারীদের আত্মত্যাগের এত অল্প সময়ের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের অংশীজনরা নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক যে বিভক্তি ও বিরোধের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে দেশের মানুষ এই বিরোধ দেখতে চায় না। আমরা চাই জুলাই সনদের ভিত্তি হবে আগামীর বাংলাদেশের প্রধান রোড ম্যাপ।
পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে উচ্চকক্ষ গঠন না করা সেটা হবে বেকার পুনর্বাসন পদ্ধতি। এ বিষয়ে মামুনুল হক বলেন, যে উচ্চকক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পিআর পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে গোটা দেশের সকল ভোটারদের সংখ্যাানুপাতিক হারে যদি বাস্তবায়ন না করা হয় । পিআর পদ্ধতি না থাকলে উচ্চকক্ষ কেবল “বেকার পুনর্বাসনের উচ্চকক্ষ” হবে, যা বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস মেনে নেবে না।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শ্রমিক–জনতার অবদান তুলে ধরে মাওলানা মামুনুল হক বলেন,২৪ শে জুলাই বিপ্লবের চেতনার ভিত্তিতে বাহাত্তরের ভারতীয় আধিপত্যবাদী বন্দোবস্তে আগামী বাংলাদেশ চলতে পারেনা। ভারতীয় সংবিধানের মূলনীতির ভিত্তিতে প্রণীত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী ৭২ এর সংবিধান বাংলার মাটিতে চলতে দেওয়া হবে না।
নিজেদের দলের প্রার্থী সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা দলীয় প্রার্থী মনোনীত করেছি যে পদ্ধতিতেই নির্বাচন হোক না কেন আমাদের প্রার্থীরা আগামী পাঁচ বছর আপনাদের সাথে থাকবে।
গোপালগঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জ এই জনপদ তথা শত শত বর্ষের। কখনো পূর্ববঙ্গ কখনো পূর্ব পাকিস্তান কখনো বাংলাদেশ নামক এই জনপদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুজাহিদে আজম আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির স্মৃতিধন্য। তার বিপ্লবী আদর্শের ভিত্তিতে আল কোরআন এবং ইসলামী সমাজ গড়বার লক্ষ্যে একটি দীপ্ত কাফেলা হিসেবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকে আজ এই পর্যায়ে উন্নীত করেছেন । আমরা আজ স্বপ্ন দেখতে পারি ইনশাল্লাহ আগামী গোপালগঞ্জ হবে শামসুল হক ফরিদপুরের আদর্শ সৃষ্ট ইসলামের গোপালগঞ্জ ।
আগামীর গোপালগঞ্জ হবে এই জমিন থেকে সমস্ত জাহেলিয়া, অন্যায়, জুলুম এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার এক নতুন গোপালগঞ্জ।
আমি আজ ওই সকল শহীদানদের স্মরণ করছে, পিলখানার, শাপলা চত্বর ,২০২৪ জুলাই বিপ্লবে যে সকল শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আজ বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে বসবাস করার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসা ফ্যাসিবাদের উৎখাত হয়েছে । বাংলার মানুষ আগামীতে ইনসাফ ভিত্তিক একটি সমাজ গড়বার স্বপ্ন দেখছে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস গোপালগঞ্জ জেলা শাখার মাওলানা ফারুক হাসান নদভীর সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমাদ,
যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মুফতি শরাফত হুসাইন,যুগ্ম মহাসচিব শরীফ সাইদুর রহমান সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুর রহমান হেলাল, কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদ মাওলানা রুহুল আমীন খান প্রমুখ।