প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ক্লাস বর্জন করে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।
আজ রবিবার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া ইউনিয়ন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীগণ। এ সময় তারা উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান এবং প্লাকার্ড প্রদর্শন করে। সকাল ১০ টা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত তারা স্কুলের সামনের সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এরপর দুপুর একটার দিকে তারা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। এ সময় ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবার স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র তুলে দেয়া হয় উক্ত কর্মকর্তার কাছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বনগ্রাম পূর্বপাড়া নিবাসী … এর মেয়ে করপাড়া ইউনিয়ন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। উক্ত স্কুলের শিক্ষক মিরাজ হোসেন বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে প্রাইভেট পড়ান। গত ৬ আগস্ট সপ্তম শ্রেণীর ওই শিক্ষার্থী প্রাইভেট শেষ করে বাসায় ফেরার আগে শিক্ষক মিরাজ হোসেন তার শ্লীলতা হানীর চেষ্টা চালায়। এ সময় ওই শিক্ষার্থী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীর অভিভাবকগণ স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি অবগত করেন। তারা আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে আজ সকাল দশটা থেকে মিরাজ হোসেনের স্থায়ী বরখাস্তের দাবিতে রাস্তায় নামেন উক্ত স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীগণ।
এ বিষয়ে ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, আমার মেয়ের উপর অত্যাচারের ঘটনা শুনে আমি প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু পরবর্তীতে অন্যান্য আরো অভিভাবকগণ একসাথে এসে জানতে পারি উক্ত শিক্ষক মিরাজ হোসেন এর আগেও বহুবার অনেক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সর্বশেষ ছাত্রীকে যৌন হয়রানের দায়ে তাকে জেল কারাগারে পাঠানো হয়। জেলখানা থেকে বের হয়ে সে আবার একই কাজ শুরু করেছে। আমরা এখন তার পদত্যাগ চাই সে যেন আর কোন স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পেতে পারে।
অভিভাবকগণ জানান, পূর্বে উক্ত শিক্ষক একই বিষয়কে কেন্দ্র করে সাময়িক বরখাস্ত ও কয়েকবার জেল খেটেও তার এখনো শিক্ষা হয় নাই। এর ফলে অনেক অভিভাবক অত্র প্রতিষ্ঠানে তাদের সন্তানদের পাঠাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। তাই আমি সহ অন্যান্য সকলের দাবী আপনার অধীনস্ত করপাড়া ইউনিয়ন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জনাব মিরাজ হোসেন এর বহিষ্কার পূর্বক চাকরিচ্যুত করে তাকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি প্রদান করা হোক।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করছে। স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষক অনুপস্থিত। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক কমলেশ বিশ্বাসকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে সহকারি প্রধান শিক্ষক পরিমল পান্ডের সাথে কথা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ইতিপূর্বেও তিনি এ ধরনের জঘন্য কাজ করেছে। আমরা আমাদের সন্তান তুল্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য যা যা করণীয় তা করব। উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরাও সুপারিশ করেছি বলেও জানান তিনি।