স্টাফ রিপোর্টার: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ কে কেন্দ্র করে হামলা ও সংঘর্ষের জেরে আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এবার গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বাসভবনে হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার ১৪ দিন অবহিত হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। মঙ্গলবার রাত অব্দি গোপালগঞ্জে উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোট ১৪ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানায় দায়েরকৃত মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো: সাজেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার রাতে সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে উক্ত মামলাটি দায়ের করেন। এ নিয়ে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন থানায় মোট ১৪ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক, লঞ্চঘাট, এস কে আলিয়া মাদ্রাসা সড়ক, কাঁচাবাজার এলাকাসহ সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে জনগণের মনে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে যান চলাচল ব্যাহত করা হয়। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের পক্ষে মিছিল করা হয়। আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে ও এনসিপির সমাবেশ বানচাল করতে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। পাশাপাশি জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করার পাশাপাশি জনসাধারণের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেন। সংঘর্ষ চলাকালে একদল দুর্বৃত্ত গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ বুধবার পর্যন্ত গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন থানায় হামলা ও ককটেল নিক্ষেপ, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, জেলা কারাগারে হামলা, জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলা, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ১৪টি মামলা দায়ের করা হলো।
গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। ১৪টি মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১ হাজার ১৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১৪ হাজার ৫৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
১৪ টি মামলা দায়ের করা হলেও এ পর্যন্ত মোট গ্রেফতারের সংখ্যা ৩৩৬। জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৩৬ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গত ১৬ জুলাই এনসিপির সমাবেশ স্থলে এবং গোপালগঞ্জ থেকে মাদারীপুর ফেরার পথে শহরের লঞ্চঘাট নামক এলাকায় তাদের গাড়ি বহরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালান। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
প্রসঙ্গত, ১৬ জুলাই এনসিপির জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। পরে পরিস্থিতি অবনতির কারণে ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে কারফিউ জারি করা হয়।
পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রথম দফায় কারফিউয়ের মেয়াদ বাড়িয়ে গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করেন। এর মধ্যে শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফায় কারফিউর মেয়াদ বাড়িয়ে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কার্যকর রাখা হয়। এরপর ১৪ ঘণ্টা শিথিল রেখে রাত ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউর মেয়াদ বাড়ানো হয়। ওই দিন রাতে কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়।